লোকসঙ্গীতের মাটির গন্ধ মিশে আছে এই গানে, কিন্তু তার উপরে যেন পড়েছে এক নতুন আলো—আধুনিক সংগীতের কারুকাজ, সাউন্ড ডিজাইন আর নিজস্ব অনুভবের মেলবন্ধনে।
এই গানটি শুধু শোনা যায় না, এটি অনুভব করা যায়—প্রাণের গভীর থেকে।
গানের ভাবনা ও নির্মাণের পেছনের গল্প
গানের জন্ম হয় এক অনুভব থেকে, আর “কালো জলে কুচলা তলে” তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই গানের ভাবনা আসে একেবারে শিকড় থেকে—বাংলার নদী, কাদা, গ্রাম্য জীবন, আর লোকগাথা থেকে। বারেন্য সাহা এই গানের সুর তৈরির সময় চেয়েছিলেন এমন একটি ফিউশন তৈরি করতে, যেখানে লোকগানের আত্মা অক্ষুন্ন থাকে, কিন্তু তার প্রকাশ হয় এক আধুনিক রূপে।
রিক বসু, যিনি নিজেই গানের কণ্ঠ দিয়েছেন, জানিয়েছেন—এই গানটি তার কাছে শুধুমাত্র একটি পারফর্ম্যান্স নয়, বরং একটি অভিজ্ঞতা। একদিকে যেমন তার গলায় ধরা পড়েছে বাংলার মাটির টান, তেমনি তাতে আছে এক শহুরে সংবেদনশীলতা, যা এই প্রজন্মের শ্রোতাদের কাছে গানটিকে করে তোলে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।
লোকগান ও ফিউশনের অনন্য মেলবন্ধন
“কালো জলে কুচলা তলে” গানের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর ফোক-ফিউশন ধাঁচ। এই গানটি কোনও পুরনো লোকগানের রিমেক নয়, বরং এটি সম্পূর্ণ মৌলিক—কিন্তু তার ভিত গাঁথা লোকসঙ্গীতের ঐতিহ্যে। বারেন্য সাহার সংগীতায়োজনে ব্যবহার হয়েছে ঢোল, একতারা, খোলের মতো লোকবাদ্যযন্ত্র, পাশাপাশি অ্যাকুস্টিক গিটার, সিন্থ, এবং ইলেকট্রনিক বিট।
এই মেলবন্ধনের ফলে গানটির প্রতিটি স্তবক, প্রতিটি সুর যেন বলছে এক নতুন গল্প, অথচ সেই গল্পের ছায়া আমরা সকলেই কোথাও না কোথাও জীবনে অনুভব করেছি।
শিল্পীদের অভিজ্ঞতা
রিক বসুর কথায়:
“এই গানটা গাওয়ার সময় আমি যেন ফিরে গিয়েছিলাম কোনো পুরনো বাংলায়—যেখানে নদী, কাদা, জল সবকিছুই একটা গল্প বলে। আমার গলায় সেই গল্প ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম, যাতে শ্রোতা শুধু গান না শোনেন, বরং সেটার মধ্যে দিয়ে হাঁটেন।”
বরেন্য সাহা কথায়:
“লোকগানের প্রতি আমার এক বিশেষ টান আছে, কিন্তু আমি চাই তা নতুনভাবে তুলে ধরতে। ‘কালো জলে কুচলা তলে’ হল সেই চেষ্টার একটা রূপ, যেখানে পুরনো আর নতুনের মেলবন্ধন ঘটেছে সততার সঙ্গে।”
